AVRO
ফৌজদারী : পেনাল কোডের অন্যান্য ধারার মামলা

ফৌজদারী মামলার রায়ের শিরোনাম

জেলা : ময়মনসিংহ

মোকাম : চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত

ময়মনসিংহ

বিচারাসীন : মো: মোমিনুল ইসলাম

চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট

ময়মনসিংহ

মামলা নং : জি.আর-১৮৩/১৫

সূত্র : গফরগাঁও থানার মামলা নং-২৫, তারিখ-৩০/০৯/২০১৫ খ্রি:

অভিযোগ : দি পেনাল কোড, ১৮৬০ এর ৩৪১, ৩২৩, ৩২৪, ৩২৬ ধারা।

ivóª...................ebvg..................1| তোতা মিয়া

২। আল আমিন

৩। কাঞ্চন

৪। মোমিন

৫। আমিন

...............আসামিগণ।

রাষ্ট্রপক্ষে - জনাব তাহমিনা আশরাফী @ পুতুল..........বিজ্ঞ এ.পি.পি।

আসামিপক্ষে - জনাব মো: মোয়াজ্জেম হোসেন বাবুল..........বিজ্ঞ এডভোকেট।

রায় ঘোষণার তারিখ :

।। রায়।।

রাষ্ট্রপক্ষের মামলা, তদন্ত ও অভিযোগপত্র :-

রাষ্ট্রপক্ষের মামলা সংক্ষেপে এই যে, পূর্ব শত্রুতার জের ধরে বিগত ২২/০৯/২০১৫ খ্রি: তারিখ সকাল অনুমান ৮:৩০ ঘটিকায় গফরগাঁও থানাধীন শিলাসী সাকিনস্থ জনৈক সুলতানের বাড়ীর সামনের রাস্তায় আসামিরা এজাহারকারী মো: চাঁন মিয়ার ছেলে কাঞ্চন ও তার স্ত্রী শাহনাজ পারভীনের পথরোধ করে তাদেরকে এলোপাথাড়ি মারপিট করে শরীরের বিভিন্ন স্থানে নীলাফুলা জখম করে। ডাক চিৎকার শুনে এজাহারকারীসহ তার পরিবারের অন্যান্য সদস্যরা ঘটনাস্থলে উপস্থিত হলে আসামি আমিন হাতে থাকা দা দিয়ে কোপ মেরে এজাহারকারীর ডানহাতে কাটা জখম করে, আসামি আল আমিন হাতে থাকা রামদা দিয়ে কোপ মেরে এজাহারকারীর ছেলে আলমের মাথার মধ্যভাগে গুরুতর হাড়কাটা রক্তাক্ত জখম করে এবং আসামি কাঞ্চন ও মোমিন দা দিয়ে এলোপাথাড়ি কোপাইয়া এজাহারকারীর ছেলে জুয়েলের মাথায় কাটা রক্তাক্ত জখম করে। ডাক চিৎকার শুনে সাক্ষীগণসহ আশেপাশের লোকজন ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে জখমীদের উদ্ধার করে চিকিৎসার জন্য গফরগাঁও উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে প্রেরণ করলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাদেরকে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার্ড করে। পরবর্তীতে এজাহারকারী হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকায় তার স্বাক্ষরিত এজাহার ভাতিজা সোবহানের মাধ্যমে থানায় প্রেরণ করতে সামান্য বিলম্ব হয় মর্মে এজাহারকারী তার এজাহারে উল্লেখ করে।

এজাহারকারীর আনীত অভিযোগের প্রেক্ষিতে দি পেনাল কোড, ১৮৬০ এর ১৪৩, ৩৪১, ৩২৩, ৩২৪, ৩২৬, ৩০৭, ৩৫৪, ৫০৬(২য় প্যারা)/১১৪, ৩৪ ধারার অপরাধের অভিযোগে গফরগাঁও থানার মামলা নং-২৫, তারিখ-৩০/০৯/২০১৫ খ্রি: হিসেবে অত্র মামলাটি রুজু হয়।

তদন্তকারী কর্মকর্তা তদন্ত শেষে আসামিদের বিরুদ্ধে আনীত এজাহার বর্ণিত অভিযোগের প্রাথমিক সত্যতা থাকায় গফরগাঁও অভিযোগপত্র নং-৫৮, তারিখ-২৩/০৫/২০১৬ খ্রি:, অভিযোগ-দি পেনাল কোড, ১৮৬০ এর ১৪৩, ৩৪১, ৩২৩, ৩২৪, ৩২৬, ৩০৭, ৩৫৪, ৫০৬(১ম প্যারা)/১১৪ ধারা আদালতে দাখিল করেন। অত:পর বিগত ০২/০৮/২০১৭ খ্রি: তারিখে আসামি তোতা মিয়া, আল আমিন, কাঞ্চন, মোমিন এবং আমিন এর বিরুদ্ধে সংশ্লিষ্ট ধারার অপরাধ আমলে গ্রহণ করা হয়।

অভিযোগ গঠন :-

মামলাটি বিচার নিস্পত্তির জন্য অত্র আদালতে প্রেরিত হওয়ার পর বিগত ০৩/০৪/২০১৮ খ্রি: তারিখে আসামি তোতা মিয়া ও আমিন এর বিরুদ্ধে দি পেনাল কোড, ১৮৬০ এর ৩৪১, ৩২৩ ধারার; আসামি আল আমিন এর বিরুদ্ধে দি পেনাল কোড, ১৮৬০ এর ৩৪১, ৩২৬ ধারার এবং আসামি কাঞ্চন ও মোমিন এর বিরুদ্ধে দি পেনাল কোড, ১৮৬০ এর ৩৪১, ৩২৪ ধারার অভিযোগ গঠন করা হয়। গঠিত অভিযোগ উপস্থিত আসামিদেরকে পাঠ ও ব্যাখ্যা করে শুনানো হলে তারা নিজেদেরকে নির্দোষ বলে দাবী করে এবং বিচার প্রার্থনা করে। অভিযোগ গঠনকালে আসামি কাঞ্চন ও আমিন পলাতক থাকায় গঠিত অভিযোগ তাদেরকে পাঠ করে শুনানো সম্ভব হয়নি।

আসামির পরীক্ষা :-

নালিশকারীপক্ষের সাক্ষ্যগ্রহণ সমাপ্ত অন্তে উপস্থিত আসামিদেরকে দি কোড অফ ক্রিমিনাল প্রসিডিউর, ১৮৯৮ এর ৩৪২ ধারার বিধান মোতাবেক পরীক্ষা করা হলে তারা নিজেদেরকে নির্দোষ বলে দাবী করে এবং বিচার প্রার্থনা করে। পাশাপাশি আসামিপক্ষ সাফাই সাক্ষী উপস্থাপন বা কাগজপত্র দাখিল করবে না মর্মে আদালতকে জানায়। উক্ত সময়ে আসামি আমিন পলাতক থাকায়দ কোড অফ ক্রিমিনাল প্রসিডিউর, ১৮৯৮ এর ৩৪২ ধারার বিধান মোতাবেক তাকে পরীক্ষা করা সম্ভব হয়নি।

ডিফেন্স কেস :-

আসামিপক্ষের জেরার ধরণ থেকে কৈফিয়ত হলো-উল্লেখিত ঘটনার তারিখ, সময় ও স্থানে কোন ঘটনা ঘটেনি এবং আসামিরা সম্পূর্ণ নির্দোষ। মূলত আসামিপক্ষের দায়েরকৃত গফরগাঁও জি.আর-১৭৬/১৫ নং মামলা থেকে বাঁচার জন্য অত্র আকারে ও প্রকারে অত্র মিথ্যা মামলাটি দায়ের করা হয়।

বিচার্য বিষয় :-

১। আসামি তোতা মিয়া বিগত ২২/০৯/২০১৫ খ্রি: তারিখ সকাল অনুমান ৮:৩০ ঘটিকায় গফরগাঁও থানাধীন শিলাসী সাকিনস্থ জনৈক সুলতানের বাড়ীর সামনের রাস্তায় এজাহারকারীর ছেলে কাঞ্চন ও তার স্ত্রী শাহনাজ পারভীনের পথরোধ করে তাদেরকে এলোপাথাড়ি মারপিট করে শরীরের বিভিন্ন স্থানে নীলাফুলা জখম করেছেন কি?

২। আসামি আমিন বিগত ২২/০৯/২০১৫ খ্রি: তারিখ সকাল অনুমান ৮:৩০ ঘটিকায় গফরগাঁও থানাধীন শিলাসী সাকিনস্থ জনৈক সুলতানের বাড়ীর সামনের রাস্তায় এজাহারকারীর ছেলে কাঞ্চন ও তার স্ত্রী শাহনাজ পারভীনের পথরোধসহ হাতে থাকা দা দিয়ে কোপ মেরে এজাহারকারী মো: চাঁন মিয়ার ডানহাতে কাটা জখম করেছেন কি?

৩। আসামি আল আমিন বিগত ২২/০৯/২০১৫ খ্রি: তারিখ সকাল অনুমান ৮:৩০ ঘটিকায় গফরগাঁও থানাধীন শিলাসী সাকিনস্থ জনৈক সুলতানের বাড়ীর সামনের রাস্তায় এজাহারকারীর ছেলে কাঞ্চন ও তার স্ত্রী শাহনাজ পারভীনের পথরোধসহ হাতে থাকা রামদা দিয়ে কোপ মেরে জখমী আলমের মাথার মধ্যভাগে গুরুতর হাড়কাটা রক্তাক্ত জখম করেছেন কি?

৪। আসামি কাঞ্চন ও মোমিন বিগত ২২/০৯/২০১৫ খ্রি: তারিখ সকাল অনুমান ৮:৩০ ঘটিকায় গফরগাঁও থানাধীন শিলাসী সাকিনস্থ জনৈক সুলতানের বাড়ীর সামনের রাস্তায় এজাহারকারীর ছেলে কাঞ্চন ও তার স্ত্রী শাহনাজ পারভীনের পথরোধসহ দা দিয়ে এলোপাথাড়ি কোপাইয়া জখমী জুয়েলের মাথায় কাটা রক্তাক্ত জখম করেছেন কি?

৫। রাষ্ট্রপক্ষ অত্র মামলার আসামিদের বিরুদ্ধে আনীত দি পেনাল কোড, ১৮৬০ এর ৩৪১, ৩২৩, ৩২৪, ৩২৬ ধারার অপরাধের অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমান করতে সক্ষম হয়েছেন কি?

রাষ্ট্রপক্ষের সাক্ষীগণের সাক্ষ্যসমূহ :-

রাষ্ট্রপক্ষ অত্র মামলায় মোট ০৫ জন সাক্ষীকে আদালতে উপস্থাপন করেন এবং আসামিপক্ষে উক্ত সাক্ষীদেরকে জেরা করেন।

পি.ডব্লিউ-১ মো: কাঞ্চন মিয়া তার জবানবন্দিতে বলেন যে, অত্র মামলার বাদী তার বাবা। সে মারা গিয়েছে। আসামি আলামিনসহ মোট ০৫ জন। ০৪ জন হাজির রয়েছে। আসামি আমিন আসেনি। অনেকদিন আগের ঘটনা, প্রায় ০৭ বছর আগের অর্থাৎ ১৫ সালের ঘটনা। সকাল ৮:০০ ঘটিকার দিকে শিলাসী গ্রামের সুলতানের বাড়ীর সামনে রাস্তায় ঘটনা। ঘটনার সময় তিনি তার স্ত্রী পারভীনকে নিয়ে ঈদের কেনাকাটা করার জন্য মার্কেটে যাচ্ছিলেন। এই সময় ঘটনাস্থলে যাওয়ার পর আসামিরা তাদের রাস্তায় আটকে মারধর করে। আসামি আলামিন দা দিয়ে কোপ মেরে তার পিতা চাঁন মিয়ার মাথায় ও ডানহাতে কাটা জখম করে। অন্য আসামি আলামিন দা দিয়ে কোপ মেরে আলমের মাথায় গুরুতর কাটা জখম করে। আলম তার ছোট ভাই। আসামি মোমেন, আমিন ও তোতা মিয়া ডেগার, রামদা, লোহার শাবল দিয়ে কোপ মেরে জুয়েলের মাথার বাম ও ডানপাশে গুরুতর কাটা জখম করে। জখমীদেরকে উদ্ধার করে প্রথমে গফরগাঁও হাসপাতালে এবং পরে ময়মনসিংহ মেডিকেলে ভর্তি করা হয়। পরে তার পিতা থানায় এসে অত্র মামলা দায়ের করে। তিনি তার পিতার স্বাক্ষর চিনেন। তিনি এজাহার এবং এজাহারে প্রদত্ত তার পিতার স্বাক্ষর সনাক্ত করেন যা প্রদর্শনী চিহ্ন-১ সিরিজ হিসেবে চিহ্নিত হয়। তিনি সত্য সাক্ষ্য দিলেন।

আসামিপক্ষের জেরায় বলেন যে, অত্র মামলার বাদী সড়ক দূর্ঘটনায় মারা গিয়েছেন। তিনি বাদীর ছেলে। সাক্ষী আলম তার সহোদর ভাই। সাক্ষী রাশেদ তার চাচা। সাক্ষী শাহানাজ তার স্ত্রী। সাক্ষী সোবহান তার চাচাতো ভাই। দুলাল উদ্দিন তার চাচা, লালু তার জ্যাঠা, ওসমান তার চাচাতো বোন, জুয়েল তার ভাই। ২২.২০০৯.১৫ তারিখে অত্র মামলার ঘটনা। ২২/০৯/২০১৫ খ্রি: তারিখে। একই ঘটনায় তাদের বিরুদ্ধে একটি মামলা হয়েছে। ঐ মামলায় তিনি ২নং আসামি। আসামিদের দায়ের করা মামলার ০৮ দিন পর তারা অত্র মামলা দায়ের করেছেন। তবে চিকিৎসার কাজে ব্যস্ত থাকায় মামলা করতে দেরী হয়েছে। ঘটনাস্থলে তার সাক্ষীরা ছাড়াও আরও ১০/১২ জন লোক ছিল যেমন বাতেন, লিটন, সুলতান, রতু মুন্সি, রিপন, লাল মিয়া, ফারুক, বছির। মারামারি শেষ হওয়ার পর রিক্সাযোগে তারা গফরগাঁও আসেন। রফিকুলের রিক্সা ছিল এটি। রাত ১০:০০ ঘটিকার দিকে তারা প্রথমে গফরগাঁও হাসপাতালে যান কিন্তু সেখানে রাখেনি, ভর্তি করেনি। পরে প্রাইভেটকারে করে তারা ময়মনসিংহ হাসপাতালে আসেন। পরে বলেন প্রাইভেট এ্যাম্বুলেন্সযোগে ময়মনসিংহ হাসপাতালে আসেন। পৌনে ১২:০০ ঘটিকার দিকে তারা হাসপাতালে পৌঁছান। তাদের ৬নং ওয়ার্ডে ভর্তি করা হয়। তিনি ০১ দিন হাসপাতালে ছিলেন। আসামিরা মামলা করলে পুলিশ হাসপাতাল থেকে তাদেরকে ধরে নিয়ে আসে। পরে জেলখানায় চিকিৎসা করানো হয়। অত:পর তিনি আসামিপক্ষের প্রদত্ত সকল সাজেশন অস্বীকার করেন।

পি.ডব্লিউ-২ আলম তার জবানবন্দিতে বলেন যে, অত্র মামলার বাদী তার আপন ভাই। আসামি আলামিন, মোমিনসহ মোট ০৫ জন। বিগত ২২/০৯/২০১৫ খ্রি: তারিখ মঙ্গলবার সকাল ৮:৩০ ঘটিকার সময় সুলতানের বাড়ীর পাশে রাস্তায় ঘটনা। তার ভাবী পারভিন মার্কেট করার জন্য তার ভাই কাঞ্চনের সাথে যাচ্ছিল। যাওয়ার পথে ঘটনাস্থলে যাওয়ামাত্র আসামিরা তাদেরকে আটকে লাঞ্চিত করে এবং রড দিয়ে পিটায়। তারা খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে গেলে আসামি আমিন ছেন দাও দিয়ে কোপ মেরে চান মিয়ার বামহাতের কনিষ্ঠা আঙ্গুলে কাটা জখম করে। আসামি আলামিন খুন করার জন্য ছেন দা দিয়ে কোপ মেরে তার মাথায় গুরুতর জখম করে। তিনি অজ্ঞান হয়ে যান। চিকিৎসার জন্য তাকে গফরগাঁও হাসপাতালে রাখেনি। তিনি ময়মনসিংহ হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নেন। তিনি দারোগার নিকট সাক্ষ্য দিয়েছেন।

আসামিপক্ষের জেরায় বলেন যে, সকাল ৮:০০ ঘটিকার সময় আসামিরা শ্লীলতাহানি করে। ১০ মিনিটের মধ্যে তারা খবর পান। ৮:৩০ টার সময় তিনি সংবাদ পান। লোক মারফত খবর পেয়ে তিনি ঘটনাস্থলে যান। ঐ সময় তিনি বাড়ীতে ছিলেন। ওসমান তাকে খবর দেয়। তার বাড়ী থেকে ঘটনাস্থল আধা কিলোমিটারের কম দূরত্ব। বাড়ী থেকে ঘটনাস্থলে যেতে ১০ মিনিট লাগে। খবর শুনামাত্রই তিনি ঘটনাস্থলে যান। তিনি রিাতে গেলে আলামিন কোপ দেয়। কোপ খাওয়ার পর তার হুশ ছিল না। ময়মনসিংহ আসার পর বিকাল ৩:০০ ঘটিকায় তার জ্ঞান ফিরে। তার বেহুশ হওয়ার পর কি হয়েছে তা তিনি জানেন না। আসামিদের দায়ের করা মামলায় তিনি ৩নং আসামি। অত:পর তিনি আসামিপক্ষের প্রদত্ত সকল সাজেশন অস্বীকার করেন।

পি.ডব্লিউ-৩ শাহনাজ পারভিন তার জবানবন্দিতে বলেন যে, অত্র মামলার বাদী চাঁন মিয়ার তার শ^শুর। আসামি তোতা, আলামিন, কাঞ্চন, মোমিন, আমিন। বিগত ২২/০৯/২০১৫ খ্রি: তারিখ অনুমান সকাল ৮:০০ ঘটিকার সময় সুলতানের বাড়ীর সামনে রাস্তায় ঘটনা। তিনি ও তার স্বামী কাঞ্চন ঈদের মার্কেট করার জন্য যাচ্ছিলেন। ঘটনাস্থলে যাওয়ামাত্র আসামিরা বেআইনী অস্ত্র নিয়ে তাদেরকে আটকে মারপিট করে। চিৎকার শুনে তার শ^শুর, দেবর আসে। তখন আসামি আলামিন দা দিয়ে কোপ মেরে তার শ^শুর চান মিয়ার ডানহাতের কনুইয়ের উপরে গুরুতর জখম করে। আসামি আমিন দা দিয়ে আরেকটি কোপ মেরে চান মিয়ার ডানহাতের কনিষ্ঠা আঙ্গুল কেটে ফেলে, শুধু চামড়ার সাথে ঝুলে ছিল। তার দেবর আলম ফিরাতে আসলে আসামি আলামিন দা দিয়ে পরপর দুইটি কোপ মেরে তার মাথায় গুরুতর জখম করে ফলে মগজ বের হয়ে যায়। তার দেবর জুয়েল এগিয়ে আসলে আলামিন ও মোমিন দা দিয়ে কোপ মেরে তার মাথায় ও ডানহাতের কনুইয়ের নীচে এবং বাম পায়ে গুরুতর জখম করে। তোতা মিয়ার হুকুমে আলামিন ও মোমিন তার চুলের মুঠি ধরে টানা হেচড়া করে। চিৎকার শুনে আশেপাশের লোকজন এসে জখমীদের উদ্ধার করে ময়মনসিংহ হাসপাতালে ভর্তি করে। তিনি দারোগার নিকট সাক্ষ্য দিয়েছেন। তিনি সত্য সাক্ষ্য দিলেন। তিনি বিচার চান।

আসামিপক্ষের জেরায় বলেন যে, শিলাসী গ্রামের সুলতান মিয়ার বাড়ীর সামনে ঘটনা। হাটুরিয়া গ্রাম থেকে ১৫০ গজ দূরে। কয় হাতে এক গজ তা তিনি জানেন না। বাড়ী থেকে ৮:০০ ঘটিকার দিকে তারা ঈদের মার্কেট করতে বের হন। সুলতানের বাড়ীর সামনে যেতে আধাঘন্টা সময় লাগে। তিনি ও তার স্বামী দুইজনই ছিলেন। তখন তাদের সাথে অন্য কেউ ছিল না। প্রথমে মারামারির সময় তিনি ও তার স্বামী ছাড়া আর কেউ ছিল না। চিৎকার চেচামেচি শুনে তার শ^শুর ও দেবর আসে। আসামিরা তাদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছে এবং ঐ মামলায় তাদের পক্ষের লোকজন আসামি। ঘটনার সময় সুলতান, লাল মিয়া, বাতেন, রিপন, ফারুক, রাসেল, সুমন, ওসমানসহ আরও অনেক লোক ছিল। তার স্বামী, ভাসুর ও শাশুড়ি জখমীদেরকে হাসপাতালে নিয়ে যায় তবে তিনি আসেননি। গফরগাঁও হাসপাতালে নিয়ে আসলে আসামিরা আবার মারপিট করে তাড়িয়ে দেয়, হাসপাতালে ভর্তি হতে দেয়নি। পরে আসামিরা মামলা করে তার শ^শুরকে গ্রেফতার করায়। অত:পর তিনি আসামিপক্ষের প্রদত্ত সকল সাজেশন অস্বীকার করেন।

পি.ডব্লিউ-৪ জুয়েল মিয়া তার জবানবন্দিতে বলেন যে, তিনি জখমী। অত্র মামলার বাদী তার পিতা। আসামি আলামিন, মোমিন, আমিন, কাঞ্চন, তোতা। বিগত ২২/০৯/২০১৫ খ্রি: তারিখ সকাল ৮:৩০ ঘটিকার সময় সুলতানের বাড়ীর সামনে রাস্তায় ঘটনা। তার ভাই কাঞ্চন ও ভাবী পারভীন ঈদ করার জন্য মার্কেটে যাওয়ার পথে আসামিরা তাদের আটকে মারধর করছিল। তিনি প্রতিবাদ করলে আসামি আলামিন ছেন দা দিয়ে তার মাথায় ও বামহাতের কনুইয়ের নীচে গুরুতর জখম করে (সাক্ষীর মাথায় ও বামহাতের কনুইয়ের নীচে জখমের চিহ্ন রয়েছে)। আসামি মোমিন বাম পায়ের হাঁটুর নীচে কোপ মেরে গুরুতর জখম করে। আসামি আলামিন ছেন দা দিয়ে চান মিয়ার ডানহাতে কোপ মেরে তর্জনী ও মধ্যমা আঙ্গুলে কাটা জখম করে। পরে তার বাবা মারা যায়। আসামি তোতা বাঁশের লাঠি দিয়ে বাড়ি মেরে তার পিতার মাথায় জখম করে। এরপর তিনি অজ্ঞান হয়ে যান। পরের ঘটনা তিনি জানেননা। তিনি চুরখাই হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিয়েছেন। তিনি সত্য সাক্ষ্য দিলেন।

আসামিপক্ষের জেরায় বলেন যে, কোন মাসের কোন তারিখ ঘটনা তা তিনি বলতে পারবেন না। তাদের গ্রাম থেকে ঘটনাস্থল ৩০০ হাত দূরে হবে। তিনি বাড়ীতে থেকে গাড়ী চালান। ঘটনার যে সময় এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে তখন তিনি বাড়ীতেই ছিলেন। তার পিতাও বাড়ীতে ছিল। তিনি ৮:৫০ ঘটিকার দিকে ঘটনাস্থলে যান। তার পিতাও তার সাথে যায়। আসামিদের দায়ের করা মামলায় তিনি আসামি। আশেপাশের অনেক লোকজন দূর থেকে ঘটনাস্থলের ঘটনা দেখেছে তবে আসামিদের হাতে দা দেখে তারা কাছে আসেনি। অত:পর তিনি আসামিপক্ষের প্রদত্ত সকল সাজেশন অস্বীকার করেন।

পি.ডব্লিউ-৫ ডা: মো: সাইফুল ইসলাম খান তার জবানবন্দিতে বলেন যে, বিগত ২২/০৯/২০১৫ খ্রি: তারিখ রাত ১১:৩০ ঘটিকায় ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরী বিভাগে জখমী চান মিয়া (৬৬) কে পরীক্ষা করা হয়। হাসপাতালের রেকর্ড অনুযায়ী উক্ত জখমীর শরীরে নিন্মোক্ত জখম পাওয়া যায় :-

1.                 Abrasion injury on scalp in right temporal region which is caused by blunt weapon and is simple in nature and the age of injury is about 02 hours.

2.                 Another cut injury on right elbow measuring 2.5cm×0.5cm×skin depth which is caused by blunt weapon and is simple in nature and the age of injury is about 02 hours.

উক্ত জখমীকে ৬নং ওয়ার্ডের সার্জারী বিভাগের ১নং ইউনিটে ভর্তি করা হয়। জখমী বিগত ২২/০৯/২০১৫ খ্রি: তারিখ হতে ২৩/০৯/২০১৫ খ্রি: তারিখ পর্যন্ত হাসপাতালে ভর্তি ছিল। তিনি উক্ত জখমী সনদ এবং জখমী সনদে প্রদত্ত তার স্বাক্ষর সনাক্ত করেন যা যথাক্রমে প্রদর্শনী চিহ্ন-২ এবং ২/১ হিসেবে চিহ্নিত হয়।

একই তারিখ রাত ১১:৪৫ ঘটিকায় ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরী বিভাগে জখমী জুয়েল (৩০) কে পরীক্ষা করা হয়। হাসপাতালের রেকর্ড অনুযায়ী উক্ত জখমীর শরীরে নিন্মোক্ত জখম পাওয়া যায় :-

1.                 H/O physical assault with incised wound in frontal region about 3cm×2cm×scalp depth which is caused by sharp cutting weapon and is simple in nature and the age of injury is about 02 hours.

2.                 Another incised wound in the left forearm about 3cm×1cm×skin depth which is caused by sharp cutting weapon and is simple in nature and the age of injury is about 02 hours.

3.                 Incised wound about 3cm×1cm×skin depth which is caused by sharp cutting weapon and is simple in nature and the age of injury is about 02 hours.

উক্ত জখমীকে ৬নং ওয়ার্ডের সার্জারী বিভাগের ১নং ইউনিটে ভর্তি করা হয়। জখমী বিগত ২২/০৯/২০১৫ খ্রি: তারিখ হতে ২৪/০৯/২০১৫ খ্রি: তারিখ পর্যন্ত হাসপাতালে ভর্তি ছিল। তিনি উক্ত জখমী সনদ এবং জখমী সনদে প্রদত্ত তার স্বাক্ষর সনাক্ত করেন যা যথাক্রমে প্রদর্শনী চিহ্ন-৩ এবং ৩/১ হিসেবে চিহ্নিত হয়।

একই তারিখ রাত ১১:৩০ ঘটিকায় ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরী বিভাগে জখমী মো: আলম মিয়া (২৪) কে পরীক্ষা করা হয়। হাসপাতালের রেকর্ড অনুযায়ী উক্ত জখমীর শরীরে নিন্মোক্ত জখম পাওয়া যায় :-

H/O physical assault on scalp (head) about 15cm×1cm×bone depth which is caused by sharp cutting weapon and is grievous in nature and the age of injury is about 02 hours.

উক্ত জখমীকে ৬নং ওয়ার্ডের সার্জারী বিভাগের ১নং ইউনিটে ভর্তি করা হয়। জখমী বিগত ২২/০৯/২০১৫ খ্রি: তারিখ হতে ২৩/০৯/২০১৫ খ্রি: তারিখ পর্যন্ত হাসপাতালে ভর্তি ছিল। তিনি উক্ত জখমী সনদ এবং জখমী সনদে প্রদত্ত তার স্বাক্ষর সনাক্ত করেন যা যথাক্রমে প্রদর্শনী চিহ্ন-৪ এবং ৪/১ হিসেবে চিহ্নিত হয়।

আসামিপক্ষের জেরায় বলেন যে, ০৩ জন জখমীর মধ্যে ০২ জনকে রাত ১১:৩০ ঘটিকায় এবং জুয়েলকে রাত ১১:৪৫ ঘটিকায় পরীক্ষা করা হয়। জখমের বয়স অনুমান ০২ ঘন্টা ছিল। জুয়েল মিয়ার ৩নং জখমটি শরীরের কোথায় ছিল তা এমসিতে উল্লেখ নেই। আলম মিয়ার জখমটি কি ধরণের তা এমসিতে উল্লেখ নেই। আলমকে সিটিস্ক্যান করার জন্য তিনি বলেননি কারণ দেখেই বলা যায় যে জখম গুরুতর। এমসিতে সনাক্তকারীর নাম উল্লেখ নেই। জখমীদের তিনি নিজে পরীক্ষা করেছেন। কোন মেডিকেল বোর্ড গঠন করা হয়নি। অত:পর তিনি আসামিপক্ষের প্রদত্ত সকল সাজেশন অস্বীকার করেন।

আলোচনা ও সিদ্ধান্ত :-

পরস্পর সম্পর্কযুক্ত হওয়ায় আলোচনা ও সিদ্ধান্ত গ্রহণের সুবিধার্থে বিচার্য বিষয়সমূহ একত্রে নেওয়া হলো।

নথি পর্যালোচনায় দেখা যায় যে, অত্র মামলায় আসামিদের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ প্রমাণের জন্য রাষ্ট্রপক্ষ জখমী সনদ প্রদানকারী ডাক্তার সাক্ষীসহ মোট ০৫ জন সাক্ষীকে আদালতে উপস্থাপন করেছেন। কিন্তু উক্ত সাক্ষীগণ এজাহার সমর্থন করে সাক্ষ্য প্রদান করেননি। যেমন আসামি আমিনের বিরুদ্ধে হাতে থাকা দা দিয়ে কোপ মেরে এজাহারকারী মো: চাঁন মিয়ার ডান হাতে কাটা জখম করার অভিযোগ। কিন্তু জখমী চাঁন মিয়া মৃত্যুবরণ করায় উক্ত অভিযোগ সংক্রান্তে তার সাক্ষ্য গ্রহণ করা সম্ভব হয়নি। তাছাড়া জখমী চাঁন মিয়ার ছেলে মো: কাঞ্চন মিয়া পি.ডব্লিউ-১ হিসেবে সাক্ষ্য প্রদান করলেও তিনি এজাহার সমর্থন করে সাক্ষ্য প্রদান করেননি। আবার এজাহারে জখমী চাঁন মিয়া ডান হাতে জখম প্রাপ্তির কথা উল্লেখ করা হলেও তার সহোদর ভাই পি.ডব্লিউ-২ আলম তার জবানবন্দিতে বামহাতে জখম প্রাপ্তির কথা উল্লেখ করেছেন। অপরদিকে পি.ডব্লিউ-২ আলম তার জবানবন্দিতে জখমী চাঁন মিয়া বাম হাতের কনিষ্ঠা আঙ্গুলে জখম প্রাপ্ত হয়েছেন মর্মে উল্লেখ করলেও পি.ডব্লিউ-৪ জুয়েল মিয়া তার জবানবন্দিতে বলেন জখমী চাঁন মিয়া ডান হাতের তর্জনী ও মধ্যমা আঙ্গুলে জখমপ্রাপ্ত হন।

অপরদিকে আসামি কাঞ্চন ও মোমিনের বিরুদ্ধে দা দিয়ে এলোপাথাড়ি কোপাইয়া জখমী জুয়েলের মাথায় কাটা জখম করার অভিযোগ। কিন্তু জখমী জুয়েল পি.ডব্লিউ-৪ হিসেবে সাক্ষ্য প্রদানকালে উক্ত অভিযোগ সমর্থন করে সাক্ষ্য প্রদান করেননি। তাছাড়া বারবার প্রসেস ইস্যু করা সত্তে¡ও রাষ্ট্রপক্ষ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তাসহ অভিযোগপত্রে উল্লেখিত অন্যান্য নিরপেক্ষ সাক্ষীদেরকে আদালতে উপস্থাপন করতে ব্যর্থ হয়েছেন।

উপরিউক্ত আলোচনা, পর্যালোচনা ও সার্বিক বিবেচনায় রাষ্ট্রপক্ষ আসামিদের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণে ব্যর্থ হয়েছেন মর্মে প্রতীয়মান হয়।

বর্ণিত কারণে রাষ্ট্রপক্ষ আসামিদের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ প্রমাণ করতে সক্ষম হয়নি মর্মে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হলো।

সুতরাং অত্র মামলার বিচার্য বিষয়সমূহ রাষ্ট্রপক্ষের প্রতিকূলে এবং আসামিদের অনুকুলে নিস্পত্তি করা হলো।

অতএব

আদেশ হয় যে,

আসামি তোতা মিয়া, আল আমিন, কাঞ্চন, মোমিন এবং আমিনকে তাদের বিরুদ্ধে আনীত দি পেনাল কোড, ১৮৬০ এর ৩৪১, ৩২৩, ৩২৪, ৩২৬ ধারার অপরাধের অভিযোগ হতে খালাস প্রদান করা হলো।

খালাসপ্রাপ্ত আসামিদেরকে এবং তাদের জামিনদারগণকে জামিননামার দায় হতে অব্যাহতি প্রদান করা হলো।

আমার উক্তি মতে কম্পোজকৃত ও আমার দ্বারা সংশোধিত

চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট

ময়মনসিংহ।

(মো: মোমিনুল ইসলাম)

চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট

ময়মনসিংহ।

 

 

Composed by : Steno Sadik

দায়বর্জন বিবৃতি (DISCLAIMER)

এই ওয়েবসাইটে প্রকাশিত অধস্তন আদালতের রায় বা আদেশের অনুলিপি কেবল মামলার সকল পক্ষ, বিজ্ঞ আইনজীবী এবং জনসাধারণের বিচার-প্রক্রিয়ায় সহজ অভিগম্যতা নিশ্চিতকরণের অভিপ্রায়ে অনলাইনে প্রকাশ করা হয়েছে; রায় বা আদেশের অনুলিপি সইমোহরী/জাবেদা নকলের (certified copy) বিকল্প হিসেবে ব্যবহার করা যাবে না। অধস্তন আদালতের রায় ও আদেশ বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে মামলার নথিতে বিধৃত মূল অংশ (রায় বা আদেশ) প্রণিধানযোগ্য।

জাবেদা নকল হিসেবে ব্যবহারযোগ্য নয়।
জাবেদা নকল হিসেবে ব্যবহারযোগ্য নয়।
জাবেদা নকল হিসেবে ব্যবহারযোগ্য নয়।
জাবেদা নকল হিসেবে ব্যবহারযোগ্য নয়।
জাবেদা নকল হিসেবে ব্যবহারযোগ্য নয়।
জাবেদা নকল হিসেবে ব্যবহারযোগ্য নয়।
জাবেদা নকল হিসেবে ব্যবহারযোগ্য নয়।
জাবেদা নকল হিসেবে ব্যবহারযোগ্য নয়।
জাবেদা নকল হিসেবে ব্যবহারযোগ্য নয়।